
অবশেষে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের একমাত্র জেটিটি। এরই মধ্যে চলছে পাইলিংয়ের কাজ। দ্বীপের বাসিন্দাদের দাবি- পর্যটক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বীপে ওঠানামার একমাত্র ভরসা জেটি। তাই পর্যটন মৌসুমের আগেই যেন জেটির নির্মাণ কাজ করা হয়। তবে কাজের গুনগত মান বজায় রেখেই দ্রুতই জেটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পর্যটক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বীপে ওঠানামার একমাত্র ভরসা পূর্ব সৈকতের জেটি। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর টানা ১১ বছর জেটির সংস্কার হয়নি। কয়েক বছর ধরে জেলা পরিষদ সংস্কার করলেও জেটির এখন নাজুক অবস্থা। জেটির দুই পাশের রেলিং ভেঙে পড়েছে। ইট-সিমেন্ট খসে পড়ছে। কাঠের তক্তা বিছিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর থেকেই দ্বীপবাসির দাবি উঠে, নতুন জেটি নির্মাণের।
অবশেষে শুরু হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নতুন জেটি নির্মাণের কাজ। এখন চলছে পাইলিংয়ের কাজ। থাকছে ৭০টি পিলার। দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, জেটি নির্মাণের ফলে দুর্ভোগ লাঘব হবে পর্যটক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন আগে থেকেই সেন্টমার্টিনবাসির দাবি ছিল নতুন একটা জেটি নির্মাণের। কারণ পুরনো জেটিটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। এখন যে নতুন জেটির কাজ শুরু হয়েছে একটা জন্য আমরা খুশি। নতুন এই জেটি নির্মাণ হলে দ্বীপবাসির পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা সুবিধা পাবেন।
দ্বীপের বাসিন্দা জমির উদ্দিন বলেন, পুরনো জেটিটা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছরই দুর্যোগে জেটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যেহেতু করে জেটি পুন:নির্মাণ করা হচ্ছে আশা করি, কাজের মানটা যেন ভাল হয়।
দ্বীপের আরেক বাসিন্দা গুরা মিয়া বলেন, জেটিটা নৌপথে যাতায়াতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেন্টমার্টিন একটি পর্যটন এলাকা। এখানে পর্যটন মৌসুমে যারা আসবেন তাদের স্বাভাবিক ও নিরাপদভাবে যাতায়াতের জন্য ঝুঁকিহীন জেটি বিকল্প নেই। তাই এখন যে জেটিটি হচ্ছে তাতে যেন কোন ধরণের অনিয়ম করা না হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, নতুন জেটির বাড়ছে উচ্চতা। রেলিংসহ নানা কাজে লোহার পরিবর্তে লাগানো হবে স্টিলের অবকাঠামো। থাকছে দুটি সিঁড়িও। যার কারণে জেটি নির্মাণের বরাদ্দ প্রায় ৭ কোটি টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত বলছেন, পর্যটনের মৌসুমের আগেই শেষ হবে জেটির নির্মাণ কাজ।
সেন্টমার্টিনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এস. এস. রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. আলী হায়দার বলেন, টার্গেট হচ্ছে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই জেটির নির্মাণ কাজ শেষ করা। সেলক্ষ্যে নতুন জেটির নির্মাণ কাজ গত মে মাস থেকে শুরু হয়েছে। নভেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হবে। তাই অক্টোবরের শেষ দিকে যাতে জেটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে সেই টার্গেটে কাজ চলছে। আর কাজের গুণগত মান বলতে গেলে জেলা পরিষদ থেকে যেভাবে ডিজাইন দেয়া হয়েছে, সেভাবে কাজ করা হচ্ছে। এখানে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই, প্রতিনিয়ত কাজ তদারকির জন্য জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা রয়েছে।
এদিকে জেটি নির্মাণের পুরো কাজ তদারকি করছে জেলা পরিষদ। তারা বলছে, কাজের গুনগত মান বজায় রেখেই নির্মিত হচ্ছে নতুন জেটি।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রতিনিধি আবদুল মাজেদ বলেন, বর্তমানে জেটির পাইলিংয়ের কাজ চলছে। মোট ৭০টি পিলার হবে। এরমধ্যে কাজ অনেকাংশে এগিয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে, কাজের গুণগত মান বজায় রেখে টার্গেট অনুযায়ী কাজ শেষ করা হবে।
২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটিটি নির্মাণ করে দেয়। আর জেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় কক্সবাজার জেলা পরিষদ।
পাঠকের মতামত